শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের ৫ সদস্যের বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন
বাঁধেই নিঃস্ব, বাঁধের উপরই বেঁচে থাকার চেষ্টা হাজারো মানুষের

বাঁধেই নিঃস্ব, বাঁধের উপরই বেঁচে থাকার চেষ্টা হাজারো মানুষের

দখিনের খবর ডেস্ক ॥ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছাসের তোড়ে যে বাঁধ ভেঙ্গে সর্বস্ব হারিয়েছে হাজারো পরিবার, সেই ভাঙ্গা বিধ্বস্ত বাঁধের উপরই ঝুপড়ি তৈরি করে এখন বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলো। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম গত চারদিন ধরে রামনাবাদ নদীর পানিতে তিন-চার ফুট তলিয়ে থাকায় বাঁধের উপর ঘর তোলার হিড়িক পড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক পরিবার শিশু,বৃদ্ধদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে চান্দুপাড়া বাঁধের উপর। এসব পরিবারে নেই বিশুদ্ধ পানি, রান্নার চুলা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। তারপরও জলোচ্ছাস থেকে বাঁচতে পাঁচ-দশফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ্যের পলিথিন, তাল ও কলাপাতার ছাউনি দেয়া ঘরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এদের চিড়া ও চিনি ছাড়া চারদিনেও দেয়া হয়নি কোন সহায়তা। যদিও স্থানীয় সংসদ সদস্য বলেন, দুর্গত এ পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে। সিডরের পর গত ১৩ বছরে একাধিক ঝড়,জলোচ্ছাসে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলেও এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তান্ডবের পর যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। ঝড়ের ঝাপটায় ঘরের কিছুটা ক্ষতি হলেও সেখানে এখন বসবাসের উপায় নেই। প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুই বেলা রাবনাবাদ নদীর তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে। নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ গ্রামে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ কারণে সম্পদ নষ্ট হলেও জীবন বাঁচাতে খোলা আকাশের নিচে চাঁদের আলোতে ঝুপড়ি তৈরি করে এখন কোন রকম দিন-রাত পার করছে পরিবারগুলো। স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। কিন্তু তাদের সহায়তায় নেয়া হচ্ছে না কোন স্থায়ী পদক্ষেপ। তিন সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন চল্লিশোর্ধ জেলে রাকিব হোসেন। ঘরে হাঁটু সমান পঁচা দূর্গন্ধ যুক্ত পানি। বেড়িবাঁধ থেকে ডুবে থাকা বাসা পর্যন্ত হেটে যেতে এ পরিবারের সকলেরই হাতে-পায়ে চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। দুইদিন পানির সাথে যুদ্ধ করার পর বৃহস্পতিবার বিকালে বাঁধের উপর বাঁশ পুতে তাতে পলিথিন ও কলাপাতার বেড়া ও ছাউনি দিয়ে পাঁচ ফুট বাই ১০ ফুটের একটি মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল তৈরি করেছেন। চান্দুপাড়া গ্রামের জেলে রাকিব হোসেন বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। কোন কামকাইজ নাই। ঘরে বাবা-বা, এতগুলা পোলামাইয়া। বাইরে যে লেবারি করমু হেই উপায় নাই। হগল জায়গায় পঁচা পানি আর পানি। চারদিন হইয়া গ্যালো বইন্নার। কয়ডা চিড়া ছাড়া কেউ কিছুই দেয়নায়। ঘরের নিচে যে মালামাল আছিলো সব ভাইস্যা গ্যাছে বানের পানিতে। বেইন্নাকালে খাইলে দুপুরে খাইতে পারি না। আর যহন নদীতে পানি বাড়ে তহন রউদে (রোদ) বইয়া থাকতে থাকতে শরীলের(শরীর) চামড়া পুইর‌্যা গ্যাছে। হেইয়ার লাইগা বাড়তে কলাগাছ ভাইঙ্গা পড়ছে। হেইয়ার পাতা দিয়া এই ঘর উডাইছি। মাঝে মধ্যেই হঠাৎ বইষ্যা আয়। তহন ভেজতে হয়। একই গ্রামের সত্তোরোর্ধ ধলা বেগম বলেন,কত বইন্না দেখলাম এই জীবনে। কিন্তু এ্ইবারের মতো ডুইব্বা থাহি নাই কোন বছর। ঘরে পানি, রাস্তায় পানি। হাঁস,মুরগী, ছাড়ল ভেড়া মরতাছে পঁচা পানি খাইয়া। ক্ষুদ্র কৃষক ফিরোজ বিয়া বলেন, ৩০টা ভেড়া পালতাম চরে। বইন্নার রাইতে সবগুলারে এক খোয়ারে রাখছিলাম। কিন্তু হঠাৎ পানিতে সবগুলা ভাইসা যায়। ২০টি ভেড়া উদ্ধার করতে পারলেও শুক্রবার জোয়ারে ভেসে আসে মরা ১০টি ভেড়ার মৃতদেহ। এতগুলা ভেড়া একসাথে মারা যাওয়ায় এখন পথে বসার উপক্রম তার। ষাটোর্ধ আয়শা বেগম বলেন, ছোটকালে একবার পানি বইন্না দেখছিলাম। আর এই মরার বয়সে আবার দেখলাম। গত তিনদিন বান্দের উপর আশ্রয় নিলেও রান্নার চুলা না থাকায় অনেকটাই অভূক্ত থেকেছেন। শুক্রবার বিকালে উপায় না পেয়ে নদীর চর দিয়া মাডি আইন্না চুলা বানাইতাছি। যদি চুলাডা হুগায় হ্যালে শনিবার কিছু রানকে পারমু। দেড় মাস বয়সী শিশু আবদুল্লাহকে নিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুপুর বেগম। প্রচন্ড ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে কোলের সন্তান। সারাদিন ক্ষুধা ও শারীরিক অসুস্থ্যতায় কান্না করলেও তাকে চিকিৎসা করাতে পারে নি এই মা। এমনকি এই পরিবারকে দেয়া হয়নি কোন সহায়তা। ষাটোর্ধ শাহালম হাওলাদার বলেন, পঁচা পানিতে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। গোটা এলাকায় একটি পুকুর নেই। নলকূপ থাকলেও তার দূর গ্রামে। এ কারণে এলাকার নারী ও শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে। স্থানীয় প্রবীন নারী-পুরুষরা বলেন, ৭০, ৯০’র বন্যা ২০০৭ সালের সিডর এরপর আইলা, রোয়ানু, মহাসেন, আম্পান ঝড় তারা মোকাবেলা করেছেন। কিন্তু এবারের মতো তাদের গৃহহারা হতে হয়নি তাদের। কোটিপতি থেকে শুরু করে দিনমজুর পরিবার। চান্দুপাড়া গ্রামের ৯০ ভাগ পরিবারের বাস এখন বাঁধের উপর। এলাকাবাসী বলেন, ঝড়ের চারদিন অতিবাহিত হলেও তারা পায়নি কোন ধরনের সরকারি সহায়তা। তাছাড়া পুকুর, নলকূপ তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। কিন্তু পানি বিশুদ্ধ করার ঔষধও তাদের দেয়া হয়নি। এ কারণে অনেক মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। মারা যাচ্ছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী। লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস তপন বলেন,হাজার হাজার মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। রাস্তার উপর খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে পরিবারগুলো। অনেক পরিবারের সংঙ্গতি থাকলেও রান্নার চুলা না থাকায় রান্না করতে পারছে না। এসব পরিবারগুলো দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যায় পড়েছে ভাঙ্গা বাঁধের কারনে। এখন যদি বৃষ্টি হয় তাহলে পরিবারগুলোকে ভিজতে হবে। এদিকে দূর্গত এলাকার মানুৃষের দূরাবস্থা দেখতে শুক্রবার বিকালে লালুয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মহিব্বুর রহমান। এ সময় তিঁনি নিজ উদ্যোগে তিন শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন। এবং জরুরী ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধান এবং স্থায়ী বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দেন। তিঁনি বলেন, মানুষ যে এত কষ্ট করছে তা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। এসব ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারকে সহায়তার আশ্বাসসহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com